‘লাভের জন্য সিনেমায় লগ্নি করি না, আমার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা’
‘আমি বাংলাদেশে ছবি প্রযোজনা চালিয়ে যাব। কিছু পুরনো সাদাকালো জনপ্রিয় ছবির রিমেকও করতে চাই। নতুন ভার্সন তৈরি করে সেগুলো মার্কেটে আনবো’
আনোয়ার আজাদ। বাস করেন সুদূর কানাডায়। তবে দূর দেশেও থাকলেও দেশি সিনেমা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। প্রযোজনাও করছেন বেছে বেছে। এরইমধ্যে আশরাফ শিশিরের গোপন দ্য ইনার সাউন্ড, গোলাম মোস্তফা শিমুলের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর এক্সকিকউটিভ প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ছিলেন অরুণ চৌধুরীর চলচ্চিত্র ‘মায়াবতী’র প্রযোজক। ১৯ মার্চ মুক্তি পেয়েছে তার প্রযোজনা সংস্থা আনোয়ার আজাদ ফিল্মস এর ছবি ‘গন্তব্য’। এই আলোচিত ছবিটির সূত্র ধরেই তিনি চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা বলেছেন আগামি দিনের পরিকল্পনা নিয়ে:
‘গন্তব্য’ ছবিটি নির্মাণ করে নির্মাতার সর্বস্বান্ত হওয়ার খবর শুনেছি। এই ছবিটি কেন পিক করলেন? ছবিটির সাথে যুক্ত হওয়ার কথা শুনতে চাই।
খুব ভালো প্রশ্ন। ‘মায়াবতী’ মুক্তির তিন মাস পরেই করোনা মহামারী শুরু হয়। আমার পরের কাজ পিছিয়ে দিয়েছিলাম। এই সময়ে অরণ্য পলাশ ও এলিনা শাম্মী আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। এই ছবির সাথে শুরু থেকেই যুক্ত ছিলাম এবং তাদেরকে শর্তহীনভাবে কিছু অর্থ দিয়েছিলাম ছবিটি তৈরি করার জন্য। তাদের বলেছিলাম, আমি আপনাদের পছন্দ করি। আমি নতুন ও তরুণ নির্মাতাদের মেধা প্রকাশের সুযোগ দিতে চাই। তাই সিনেমা মুক্তির পর সুবিধাজনক সময়ে লাভের কোনো অংশ ছাড়াই টাকা ফেরত দিলেই চলবে।
আচ্ছা…
সিনেমা নির্মাণের সময় আর্থিক সমস্যায় পড়েন তারা। অনেক চেষ্টা করেই তারা সিনেমাটি বিক্রি করতে বা থিয়েটারে মুক্তি দিতে ব্যর্থ হন। তারা ছবিটির দায়িত্ব আমাকে নিতে বলেন। আসলে আমি ছবিটির দায়িত্ব নিয়েছি ছবিটি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের সহায়তা করার জন্য। এই ছবিটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করা হয়েছে, তাই ছবিটির ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ারের তারিখ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে (১৭ মার্চ) বেছে নিয়েছি। হলে মুক্তি পেয়েছে ১৯ মার্চ।
এর আগে আপনি অরুণ চৌধুরীর একটি ছবি প্রডিউস করেছেন। ছবি দিয়ে ব্যবসার কথা যদি বলি, সেটা কি ঠিকঠাক হচ্ছে? মানে আপনার লগ্নিকৃত টাকা উঠে আসছে?
আমি আসলে লাভের জন্য সিনেমায় লগ্নি করি না। আমি কানাডায় থাকি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শুধু প্রযোজক নই, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের আয়োজক হিসেবেও কাজ করি। আমার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমার মূলধন ফিরলেই আমি খুশি। বাংলাদেশি কানাডিয়ান হিসেবে আমি আমার জন্মভূমির জন্য কিছু করতে চাই। কারণ আমি সেখানেই বেড়ে উঠেছি, বাংলাদেশের করদাতাদের অর্থে উচ্চশিক্ষা নিয়েছি এবং কম বয়সে দেশ ছেড়েছি। আমার জন্মভূমির জন্য কিছু করার প্রয়াস থেকে বিনিয়োগ করছি এবং মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছি, যেন কিছু মানুষ আমার কাজের কারণে উপকৃত হয়। আশা করি বাংলাদেশে কাজ করার উদ্দেশ্য আমি পরিষ্কার করে বোঝাতে পেরেছি।
‘মায়াবতী’ মুক্তির তিন মাস পর থেকে করোনা শুরু হওয়ায় মার্কেট থেকে অর্থ পাইনি। ফলে ‘মায়াবতী’তে বিনিয়োগ করা অর্থের ৬০% উঠে আসেনি।
আপনি যেহেতু কানাডা প্রবাসী, সেখানে বা অন্য অঞ্চলে বাংলা ছবির বাজার কেমন? বা প্রবাসী বাঙালিরা কেমন ছবি চায়?বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ছবির ভালো বাজার আছে। দর্শকের মান যেহেতু আলাদা, তাই সিনেমাগুলোরও অর্থবহ ও ভালো বার্তার হওয়া চাই। তাহলেই দর্শক আসবে। গতানুগতিক ধারার সিনেমা দিয়ে খুব একটা মার্কেট করা যাবে না বাহিরে।
ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অব সাউথ এশিয়া সহ আপনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবের সাথে যুক্ত। এসব উৎসবে বাংলা ছবির চাহিদা কি আলাদা করে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন?আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালগুলোতে বাংলা ছবির অবস্থান এখন ভালো। বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে আমরা ভালো খবর পাই, সেরা নির্মাতা, সেরা ছবির পুরস্কার জিতে নেয় ছবিগুলো।
আইএফএফএসএ টরেন্টোর মূল সদস্যদের একজন হিসেবে আমার উত্তর হলো, আমাদের ফেস্টিভালে সবচেয়ে বেশি দেখা ছবির তালিকায় হিন্দি ছবির পরেই বাংলা ছবির অবস্থান। এটি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের জন্য খুবই উৎসাহ জাগানিয়া খবর।
বাংলা সিনেমা নিয়ে আপনার সামনের পরিকল্পনা কী? বিশেষ করে প্রযোজক হিসেবে?
আমি বাংলাদেশে ছবি প্রযোজনা চালিয়ে যাব। কিছু পুরনো সাদাকালো জনপ্রিয় ছবির রিমেকও করতে চাই। নতুন ভার্সন তৈরি করে সেগুলো মার্কেটে আনবো। নতুন প্রজন্মকে দেখাতে চাই আমাদের আগে কী ছিল! তখন আমরা দর্শক ফেরাতে পারবো।
আরেকটি পরিকল্পনা হলো একটি বাংলা ছবি কিনে বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে বিভিন্ন দেশের বাজারে মুক্তি দেয়া। বাংলাদেশ ও বিদেশের ফিল্ম মার্কেটিং এর নিয়ম কানুন ও বিধিনিষেধ মেনেই কাজটি করা হবে। নিয়মের বাইরে কিছুই করবো না।
ধন্যবাদ আপনাকে…
চ্যানেল আই অনলাইনকেও ধন্যবাদ।